Breaking
30 Apr 2025, Wed

Eaikal Exclusive: ব্যারাকপুরের ভোট যুদ্ধে বাহুবলী অর্জুনের সব অস্ত্র এবার পার্থর তুণে!

শোভনলাল রাহা, নৈহাটি

Advertisement

অর্জুনের আগ্নেয়াস্ত্র, নাকি পার্থর মগজাস্ত্র? বাহুবলী অর্জুন সিং, নাকি সাংগঠনিক পার্থ ভৌমিক? লোকসভা নির্বাচনে জিতে এবার দিল্লি যাবেন কে? এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে টিটাগড় থেকে কাঁচরাপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের আনাচে কানাচে। যা নিয়ে চর্চা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে।
সংবাদ মাধ্যমের একটা বড় অংশ বলছে, এবারও ব্যারাকপুরে ২০১৯ সালের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। অর্থাৎ ফের দলবদলু অর্জুন তৃণমূলকে হারিয়ে দেবেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সেকথা বলছেন না। তাঁদের যুক্তি, এবারের ভোটযুদ্ধে বাহুবলী অর্জুনের প্রায় সব অস্ত্রই তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের তুণে রয়েছে। অর্জুন তাই এবারের যুদ্ধে অনেকটা “কুরুক্ষেত্রের অভিশপ্ত কর্ণ”। কারণ, গতবার অর্থাৎ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে অর্জুনের কাছে থাকা রথী-মহারথীরা প্রায় সবাই এবার পার্থ শিবিরে। তাছাড়া মামুদপুরের বাসিন্দা বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সভাপতিফাল্গুনী পাত্র ও তাঁর শিবির গতবার অর্জুনের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু এবার দল বদলু অর্জুনের প্রতি তাঁর অনাস্থা তিনি প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন। আদি বিজেপির একটা বড় অংশ এবার অর্জুনের সঙ্গে নেই বলে রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন।

এবার বীজপুর থেকে সাত টি বিধানসভা কেন্দ্রেই অর্জুনের গত বারের হাতিয়াররা এবার পার্থ শিবিরে।
প্রথমেই যাঁর নাম উঠে আসছে, তিনি হলেন বীজপুরের বিধায়ক সুবোধ অধিকারী। গতবার ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় তিনি ছিলেন অর্জুন শিবিরে। এবার তিনিই অর্জুনের সব থেকে বড় মাথা ব্যাথার কারণ। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হওয়ার পর উন্নয়ন আর সাংগঠনিক দক্ষতার যুগপৎ কারণে তিনি এখন ব্যারাকপুর এলাকার সব থেকে শক্তিশালী বিধায়ক। এবার তিনি তাঁর বীজপুর এলাকার সাতটি বিধানসভার মধ্যে সর্বাধিক ভোটে তৃণমূলকে লিড দেওয়ার চালেঞ্জ জানিয়েছেন অর্জুনকে।
গতবার লোকসভা ভোটের সময়, বীজপুরের ভূমিপুত্র মুকুল রায় বিজেপিতে থাকায় বীজপুরে তৃণমূলের সংগঠন অনেকটাই এলোমেলো ছিল। এবার সেই মুকুল রায় সজ্জাসায়ী। অর্জুনের ভাইপো ভাটপাড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান সৌরভ সিং এবার তৃণমূল শিবিরে থেকে কাকা অর্জুনের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়োগ করে এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। অথচ গতবার এই সৌরভ সিং ছিলেন অর্জুন শিবিরে। ভাটপাড়ার আর এক কাউন্সিলর গোপাল রাউত গতবার অর্জুনের সঙ্গে বিজেপির পতাকার তলায় থাকলেও এবার তিনি স্বমহিমায় পার্থ ভৌমিকের শিবিরেই। অর্জুন সিংয়ের আর এক ভাইপো পাপ্পু সিং, যিনি গতবারের লোকসভা ভোটে ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সৈনিক। এবার সেই পাপ্পু সিং তৃণমূল কর্মী বিকি যাদব খুনের মামলায় জেলবন্দি। তৃণমূলের অভিযোগ , এই পাপ্পু সিং অর্জুনের ক্রিমিনাল পলিটিক্সের মাস্টার মাইন্ড। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাপ্পু জেলবন্দি থাকার কারণেই স্পর্শকাতর ভাটপাড়া-জগদ্দল এলাকায় লোকসভা ভোটের আবহে খুন তো দূরের কথা, এখনও কোনও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও সামনে আসেনি। অর্জুন সিং তৃণমূলে থাকাকালীনও জগদ্দলের তৃণমূল বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম সাংসদের বিরুদ্ধে “ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি”র অভিযোগে সরব ছিলেন।
গত লোকসভা ভোটের সময় নোয়াপাড়ার বিধায়ক ছিলেন অর্জুনের ভগ্নিপতি সুনীল সিং। কিন্তু এখন নোয়াপাড়ার বিধায়ক মঞ্জু বসু। তৃণমূল বিধায়ক মঞ্জু বসুর স্বামী বিকাশ বসু খুনের মামলায় জড়িত হওয়ার অভিযোগে জেল খেটেছিলেন অর্জুন। যদিও তথ্য প্রমাণের অভিযোগে পরে বেকসুর খালাসও পান। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বার্ষিয়ান বিধায়ক মঞ্জু বসু তাঁর স্বামী তৃণমূল নেতা বিকাশ বসুর খুনের বিচার এবার তাঁর বিধানসভার আমজনতার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।
অর্জুনের ২০১৯ এর ভোট যুদ্ধের আর এক সেনাপতি ছিলেন প্রয়াত মনীশ শুক্লা। টিটাগড়ের মনীশ ছিলেন অর্জুনেরই ভাবশিষ্য। অর্জুনের মতোই বাহুবলী ইমেজ ছিল তাঁর। এই মনীশ ছিলেন টিটাগড়ের বেতাজ বাদশা। কয়েক বছর আগে মনীশ খুন হন। তাই এবার মনীশ-শুন্য টিটাগড়ে বাহুবলী অর্জুন অনেকটাই বেকায়দায় বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সেই সময় ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত এবার বিজেপির দমদম কেন্দ্রের প্রার্থী। এখন ব্যারাকপুরের বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী অর্জুনকে বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ছেন না। অন্যদিকে, জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যামও দিনরাত এক করে অর্জুনকে হারাতে মরিয়া। তাই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, বাহুবলী অর্জুন এবার পার্থের মগজাস্ত্রে বেসামাল।

Developed by